খুলনার দিঘলিয়া উপজেলায় জেলেদের জালে ভারতের গবেষণা কাজে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুরবাস্কা কচ্ছপ উদ্ধার করা হয়েছে।

শনিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার কাজীরহাট এলাকায় স্থানীয় এক জেলের জালে  কচ্ছপটি আটকে পড়ে। গাজীরহাট ক্যাম্প পুলিশ কচ্ছপ উদ্ধার করে বন বিভাগে খবর দেয়। এরপর রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে বন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসে উদ্ধার করে করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে যান।

করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজাদ কবির জানান, শনিবার গাজীরহাটে জেলের জালে কচ্ছপটি ধরা পড়ার পর সেটা প্রথমে পুলিশ উদ্ধার করে। এরপর বন বিভাগের খুলনা অঞ্চলের সিএফ মিহির কুমার দে খবর পেয়ে জানালে আমরা উদ্ধার করে করমজলে এনে রেখেছি। পরবর্তী সময়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, এসব প্রাণী প্রকৃতির ইকোসিস্টেম রক্ষা করে। এর বিলুপ্তি ও অনুপস্থিতে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য নষ্ট হয়। তাই প্রকৃতির ভারসম্য ও বিলুপ্তপ্রায় কচ্ছপ সংরক্ষণ এবং প্রজননে সরকারি প্রশাসনিক বিভিন্ন দফতর এলাকায় প্রকল্প করা হলে, তা আরও ফলপ্রসূ হবে। কারণ এগুলো নদী-সাগর ও সুন্দরবনে ছাড়া থাকলে বা অবমুক্ত করলে তা জেলেদের জালে আটকে পড়ে। পরে তারা সেগুলো বাড়িতে বাণিজ্যিক ও খাওয়ার জন্য লালন-পালন করে। তাই অবশেষ বিলুপ্তি ঠেকাতে প্রশাসন এলাকায় এর প্রকল্প গড়ে তোলা জরুরি।

Mongla-2


পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল পর্যটন ও বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে গড়ে ওঠা বাটাগুরবাস্কা প্রজেক্টের স্টেশন ম্যানেজার আব্দুর রব জানান, মূলত বিলুপ্ত প্রজাতির বাটাগুরবাস্কা কচ্ছপের গতি ও আচরণবিধি, বিচরণ ক্ষেত্র, খাদ্যভাস ও প্রজনন সম্পর্কে জানতে ভারতের টাইগার প্রজেক্ট গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটির সজনেখালী এলাকার কুলতলীতে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার বসানো ১০টি পুরুষ কচ্ছপ অবমুক্ত করে। এরপর ১১ দিনের মাথায় সেটা নদী-সাগর হয়ে দিঘলিয়া উপজেলার গাজীরহাটে চলে আসে। ভারতের এই ধরনের আরও একটি কচ্ছপ পূর্ব সুন্দরবনের বলেশ্বর ও সাউথখালীর নদীতে বিচরণ করছে। ভারতের টাইগার প্রজেক্টে স্যাটেলাইট ট্রান্সমিটার সমৃদ্ধ ১০ বাটাগুরবাস্কার পাশাপাশি ২শ’ কচ্ছপ গবেষণায় সংগৃহীত রয়েছে।

তিনি আরও জানান, এক সময়ে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে বাটাগুরবাস্কা প্রজাতির কচ্ছপের অস্তিত্ব ছিল। এখন এগুলো বিলুপ্তপ্রায়। এসব দেশের উপকূলীয় এলাকায় দুই-একটির যৎসামান্য অসস্তিত্ব রয়েছে। সেগুলো সংগ্রহ করেই গবেষণার কাজ করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আব্দুর রব জানান, বিলুপ্ত প্রায় বাটাগুরবাস্কা প্রজাতির কচ্ছপ সংরক্ষণ, প্রজনন, গতি ও আচরণবিধি, বিচরণ ক্ষেত্র, পানিতে ডুবে ও ভেসে থাকার সময় নির্ণয়সহ নানা কার্যক্রম জানতে বাংলাদেশ বনবিভাগ, অস্ট্রিয়ার ভিজুয়েনা, আমেরিকার টিএসএ ও ঢাকার প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন যৌথভাবে কাজ করছে।

তথ্যসূত্র; বাংলা ট্রিবিউন